এবার বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রতি যে ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিলো মালয়েশিয়ার সরকার বিস্তারিত পড়ুন!

মালয়েশিয়ায় আটক অবৈধ বিদেশি কর্মীদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ফলে আটক প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে নতুন করে এই অভিযান এবং মানব পাচার সিন্ডিকেটের দৌরাত্মের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া স্থগিত করায় মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রেরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মালয়েশিয়ায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা রিহায়ারিং কর্মসূচির মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে অনিয়মিত বিদেশি কর্মীদের তাদের ভিসা স্ট্যাটাস নিয়মিত করতে সুযোগ দিয়েছিল দেশটির সরকার। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ১ জুলাই থেকে ‘অপস মেগা ৩.০’ শুরু হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাং, কোতারায়া, পেতালিং, পোলাউ পিনাং, ইপু পেরাকসহ মালয়েশিয়ার কয়েকটি প্রদেশে অবৈধদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। কয়েক দিনের অভিযানে অবৈধ প্রায় চার হাজার বিদেশি কর্মীকে আটক করা হয়েছে। যাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বাংলাদেশি বলে জানা গেছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশটিতে প্রায় ১০ লাখের মতো বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নিয়মিত কর্মী হিসেবে কাজ করছে। বাকিরা নিয়মিত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তবে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বৈধ হতে কোম্পানি কিংবা দালালের কাছে টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিয়েও বৈধতার সুযোগ পাননি। তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এছাড়া অনেক সময় নিয়োগকর্মী পাসপোর্ট জিম্মি করে রাখায় কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়ছে।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৮ হাজার কর্মী বৈধতা পেতে নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৩২ জনকে বৈধতার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। যাদের ৩০ আগস্টের মধ্যে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এছাড়া প্রতারক কোম্পানি ও এজেন্ট শনাক্তে শিগগিরই মাঠে নামছে কর্তৃপক্ষ।

গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, অনিয়মিত বিদেশি কর্মীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩০টি মানবাধিকার সংগঠন এই আটক অভিযান বন্ধে মালয়েশিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে এসব বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই অভিযান বিদেশি কর্মীদের আরও ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

শ্রম ও অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ট্যুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসাসহ ডিপিটেন নামক ভিসায় গিয়ে অনেক বাংলাদেশি অবৈধ হয়ে পড়েছেন। তাদেরকেই ধরার জন্য অভিযান চলছে। তবে জিটুজি অথবা জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত কর্মীরা অবৈধ নয়। আর যারা নিয়মিতকরণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন তারা যেন হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা: মানব পাচার সিন্ডিকেটের দৌরাত্মের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া স্থগিত ও নতুন করে ধড়পাকড়ে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রেরণ কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের গত ছয় মাসে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা ২৬৮ কোটি এক লাখ ৯১ হাজার ৫৫১ রিংগিত পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৮১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪ হাজার ৫১১ টাকা। চলতি বছরের শুরু থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে মালয়েশিয়াস্থ এনবিএল ও অগ্রণী রেমিটেন্স সংশ্লিরা জানান। যদিও প্রবাসীরা বলছেন, অবৈধ পথে এর দ্বিগুণ অর্থ পাঠানো হয়েছে।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, রেমিট্যান্সের পরিমাণ বিবেচনায় মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটিতে কর্মী প্রেরণে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। অতিঅপপ্রচারে যাতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ না হয় এবং রেমিট্যান্সে প্রভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।